দাওয়াতে তাবলীগ জামাত

দাওয়াতে তাবলীগ জামাত

আজকে আমরা আলোচনা করব তাবলীগ জামাত সম্পর্কে। এই পোষ্টের মাধ্যমে তাবলীগ জামাতের ইতিহাস, উৎপত্তি, কে প্রতিষ্ঠা করেন, তাবলীগ জামাত এর ফজিলত, তাবলীগ জামাত সঠিক না ভুল সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

তাবলীগ জামাত

তাবলীগ জামাত হচ্ছে একটি ইসলাম ধর্মভিত্তিক সংগঠন। যারা মানুষকে ইসলামের পথে আসতে আহ্বান জানায়। তাদের মূল লক্ষ্য হলো মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা এবং মুসলমানদের ও অন্যান্য মানুষদের সঠিক ধর্মচর্চা করতে সাহায্য করা। যেভাবে নবী মুহাম্মদ (স:) তার জীবন দশায় ইসলামের চর্চা করেছিলেন ঠিক সেভাবে তারা মানুষকে ধর্মচর্চা করতে আহ্বান জানান। সারা বিশ্বে আনুমানিক দেড় কোটি থেকে ৮ কোটি তাবলীগ জামাতের অনুগামী রয়েছে এবং অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করেন এবং সারা বিশ্বের ১৮০ টির বেশি দেশে এদের উপস্থিতি রয়েছে। বিশ শতকে ইসলামের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় সংগঠনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত ২০২৪ কবে,কয়টায়

১৯২৬ সালে ভারতে সর্বপ্রথম তাবলীগ জামাতের উৎপত্তি ঘটে। তাবলীগ জামাতের মূল ভিত্তি হল ছয়টি। সেগুলো হল:- কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, সহি নিয়ত বা একলা সে নিয়ত এবং দাওয়াত ও তাবলীগ।

এটি কোন রাজনীতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এ সংগঠনটি কোন রাজনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করে না। তারা মূলত ধর্ম প্রচারে কাজ করে থাকে। অনেক সময় তাবলীগ জামাতের জামাতকে নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়েছিল। তাদের রাজনৈতিক দলের সাথেসম্পৃক্ততা এবং সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত হওয়া সম্পর্কে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রমাণিত হয়নি।

দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন ?

দাওয়াত এর অর্থ হল আল্লাহর দিকে আহবান করা আর তাবলীগ অর্থ হলো আহকামের দিকে আহবান করা তাবলীগ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল প্রচার করা, প্রসার করা, ইসলামের দাওয়াত দেওয়া,বয়ান করা ইত্যাদি।

তাবলীগের মূল কাজ হল মানুষকে ভুল পথ থেকে আল্লাহর পথে আনতে সাহায্য করা এবং তাদেরকে সঠিকভাবে ধর্ম প্রচার এর মাধ্যমে তাদেরকে ইহকাল ও পরকালের আজাব থেকে রক্ষা করা। বিশ্ব ইজতেমার ম্যাপ ২০২৪ ডাউনলোড

তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা কে ?

১৯২৬ সালে ভারতে তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠা করেন হযরত ইলিয়াস কান্ধলবী। দ্রুত সারা বিশ্বে ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে তিনি এই সংগঠনটি গড়ে তুলেন। আস্তে আস্তে এর সংগঠনটি জনপ্রিয় ও বড় হতে শুরু করে। তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের পথে আনতে এই সংগঠনটি বড় একটি ভূমিকা পালন করে।

তাবলীগ জামাতের ইতিহাস

১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের রাজস্থানে মাওলানা মোঃ ইলিয়াছ রহমতউল্লাহ সর্বপ্রথম তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম শুরু করেন তাবলীগ জামাতের ইতিহাস। এরপর ১৯২০ সালে দিল্লিতে তাবলীগের বিস্তৃতি করতে থাকে। পঞ্চাশের দশকে মাওলানা আব্দুল আজিজ এর প্রচেষ্টায় ঢাকা ও এর আশেপাশে তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ভারত উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রায় ১৮০ টি দেশ ছড়িয়ে পড়েছে। এর কার্যক্রম সূচনার পর নেতৃত্ব প্রদান করেন এর প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহমতউল্লাহ।

১৯৪৪ সালে তাবলীগের হাল ধরেন তার পুত্র মাওলানা ইউসুফ সাহেব। শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকিরিয়া তাবলীগ কর্মীদের জন্য ”তাবলীগের নেসাব” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। মাওলানা ইউসুফ সাহেব রহমতুল্লাহ ও শায়খুল হাদিস জাকিরিয়া ইন্তেকালের পর তখন বিশ্বে তাবলীগ জামাতের নেতৃত্ব দেন মাওলানা এনামুল হাসান রহমতউল্লাহ।বিশ্ব ইজতেমা শুরু কবে হবে ২০২৪ ১ম পর্ব ও ২য় পর্ব

তাবলীগ করা কি ফরজ

জি, তাবলীগ করা ফরজ। তবে এটি সকলের উপর গুরুত্ব বহন করে না। প্রয়োজন বেধে এর গুরুত্ব বহন করে। অর্থাৎ যে ব্যাক্তি যতটুকু যোগ্য তাকে ততো বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।
কারণ কোরান শরীফে যেমন ভালো কাজের জন্য আদেশ করতে বলা হয়েছে তেমনি খারাপ কাজের জন্য নিষেধ করতে বলা হয়েছে।

প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তি কে তার যার যার অবস্থান থেকে দিন প্রচারের জন্য বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর নাযিলকৃত দিনকে তার নির্দেশনা অনুযায়ী উম্মতের নিকট পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে।

তাবলীগ জামাত সঠিক না ভুল

সম্প্রতি তাবলীগ জামাত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু আমাদের ইসলামী জ্ঞান কম থাকার কারণে আমরা কোন দলকে অনুসরণ করব সেটা বুঝতে পারিনা।

তাবলীগ জামাত সঠিক না ভুল এ সম্পর্কে ইসলামী বিদদের মধ্যে একেক মতবাদ রয়েছে অনেকেই তাবলীগ জামাতকে সঠিক মনে করেন। আবার অনেকেই এর ভুল-ত্রুটি নিয়ে তাবলীগ জামাতকে অবৈধ বলেন।

যারা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ও তার সাহাবীদের অনুসরণ করে অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আদর্শ নিজ মনে ধারণ করে। সাহাবীদের ভুল ত্রুটি গুলো অযথা সাইডবোর্ডের মতো চর্চা করে বেড়ায় না এবং কোরআন ও সুন্নাহ এর আলোকে জীবন যাপন করে। এই গুন্ গুলো যায় দলে থাকবে আপনি সেই দলকে সমর্থন করবেন।

দাওয়াতে তাবলীগের ফজিলত

দাওয়াতে অংশগ্রহণ করার জন্য আল্লাহ তাআলা নিজ থেকেই মানুষকে আদেশ করেছেন।তিনি বলেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত। যাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য পাঠানো হয়েছে। তোমরা নেক কাজের আদেশ করো এবং মন্দ কাজের নিভৃত রাখো এবং আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান রাখ। (সূরা আলে ইমরান আয়াত -১১০)
এছাড়াও আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ওই ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে আহবান করে এবং সৎ আমল করে এবং বলে আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হামিম সাজদা আয়াত -৩৩)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, তার কথার চেয়ে উত্তম আর কোন কথাই হতে পারে না যে আহ্বানের সাথে সাথে সৎ আমল করে এবং স্বীকার করে যে আজ্ঞাবহ তবে সেই ব্যক্তি উত্তম।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নেক আমল করবে এবং দ্বীনের দাওয়াত দিবে। যাকে দ্বীনের দাওয়াত দিবে সে ব্যক্তি যে পরিমাণ আমলের সওয়াব পাবে ঠিক সমপরিমাণ সওয়াব সে (যে দাওয়াত দিবে) পাবে ওই (যাকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছে) ব্যক্তির আমল কবুল হোক বা না হোক।

তাবলীগ সম্পর্কে হাদিস

তাবলীগ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে স্পষ্টভাবে অনেক জায়গায় উল্লেখ করেছেন। তাবলীগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেন, ওই ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে আহবান করে এবং সৎ আমল করে এবং বলে আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হামিম সাজদা আয়াত -৩৩)

এছাড়াও পবিত্র কোরআনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এবং সেখানে বলা হয়েছে, হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন, তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলেন না। (সূরা মায়েদা, আয়াত- ৬৭)

আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মোহাম্মদীকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং বলেছেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত। যাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য পাঠানো হয়েছে। তোমরা নেক কাজের আদেশ করো এবং মন্দ কাজের নিভৃত রাখো এবং আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান রাখ। (সূরা আলে ইমরান আয়াত -১১০)

তাবলীগ জামাত কি জায়েজ

জি, তাবলীগ জামাত জায়েজ। তাবলীগ জামাত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে স্পষ্টভাবে অনেক জায়গায় উল্লেখ করেছেন। তাবলীগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেন, ওই ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে আহবান করে এবং সৎ আমল করে এবং বলে আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হামিম সাজদা আয়াত -৩৩)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নেক আমল করবে এবং দ্বীনের দাওয়াত দিবে। যাকে দ্বীনের দাওয়াত দিবে সে ব্যক্তি যে পরিমাণ আমলের সওয়াব পাবে ঠিক সমপরিমাণ সওয়াব সে (যে দাওয়াত দিবে) পাবে ওই (যাকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছে) ব্যক্তির আমল কবুল হোক বা না হোক।

তাবলীগ জামাতের ভুল

তাবলীগ জামাতের কিছু ভুল ধারণা নিচে উল্লেখ করা হলো-

১. তাবলীগ জামায়াতের লেখকদের এক লিখিত কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে মূর্খ হোক আলেম হোক ধনী হোক দরিদ্র হোক সকল পেশার সকল মুসলমানদের জন্য তাবলীগ করা ফরজে আইন।

২. তাবলীগ জামাতের আরেকটি কিতাবে লেখা হয়েছে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অন্যান্য ধর্মীয় তরিকা যা সকল দ্বীনি আন্দোলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত যার থেকে ভালো তরিকা আর হতে পারে না।

৩. প্রচলিত তাবলীগ হচ্ছে নবীওয়ালা কাজ।

৪. নামাজরোজা উচ্চাঙ্গের ইবাদত কিন্তু দিনের সাহায্যকারী নয়।

৫. মুখ্য লোক আমির হওয়ার জন্য তিন চিল্লায় যথেষ্ট আর আলেমদের জন্য প্রয়োজন সাত চিল্লার।

৬. তাবলীগের আরেকটি কিতাবে বলা হয়েছে হযরত আদম আলাই সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন এবং হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দাওয়াত না দিয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি।

দাওয়াতে তাবলীগ জামাত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to top