তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা

তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা

আপনি কি তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় প্রবেশ করেছেন। আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা তরমুজের উপকারিতা, তরমুজে কি ভিটামিন আছে, তরমুজের বিচির উপকারিতা, তরমুজের বীজ খাওয়ার নিয়ম, তরমুজের খোসার উপকারিতা, খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়, তরমুজের অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করবো। নাজাতের ১০ দিনের দোয়া ও ফজিলত 2024
তাই তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

তরমুজের উপকারিতা

গ্রীষ্মকালের এক সুস্বাদু ফল তরমুজ। শুধু স্বাদ আর প্রশান্তি নয়, স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও তরমুজ অনেক উপকারী। তরমুজে থাকা উপকারী একাধিক উপাদান গুলো হলো একাধিক ভিটামিন, অ্যামাইনো এসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লাইকোপেন এবং পানি।

গরমে পানির ঘাটতি কমাতে তরমুজ খুবই কাজের। তরমুজের প্রায় ৯২ ভাগই পানি। তাই শরীরকে ঠান্ডা করতে ও পানি শূন্যতা কমাতে তরমুজ অতুলনীয়। তরমুজ মস্তিষ্ক ও শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং নিমিষেই শরীরের শক্তি সঞ্চার করে। তরমুজে ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম সামান্য পরিমাণ তরমুজায়ি প্রায় ৪৫ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায় নিয়মিত তরমুজ খেলে প্রতিদিনের ভিটামিন -এ এর চাহিদা ৭ শতাংশ এবং ভিটামিন সি এর ২১ শতাংশ পূরণ হয়।

গরমের ফল তরমুজে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি। এ ছাড়া এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিজেন। তরমুজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো লাইকোপেন। এই লাইকোপেনের উপস্থিতির কারণেই তরমুজ এমন লাল টকটকে দেখায়। এসব উপাদানের উপকারিতাও কম নয়। গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে তরমুজে থাকা লাইকোপেন। এটি মানব দেহের কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

তরমুজে থাকা লাইকোপেন মানব দেহের কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং হিট স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে খুব ভালো কাজ করে। যেসব খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, তরমুজ তার মধ্যে অন্যতম। তরমুজে থাকা ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি৬ শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও তরমুজে থাকা এমাইনো এসিড শরীরের ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। তরমুজের আরেকটি গুণ হলো এটি ত্বক ও চুলের জন্য বেশ উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন সি চুল ও ত্বকে শক্তি সঞ্চার করে। জার্মানির একটি গবেষণায় বলা হয়েছে লাইকোপেন ও বিটাক্যারোটিন ত্বককে রোদে পুরা থেকে সুরক্ষা করে। তাই রোদে পড়া ত্বকের একটি ভালো সমাধান হলো তরমুজ। তরমুজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভিটামিন এ। এটিও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন এ ত্বকের ক্ষয় কমানো নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে। চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন এ এর বিকল্প নেই।

তরমুজে পাওয়া ভিটামিন এ চোখের সুস্থতার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন, তাদের জন্য তরমুজ আরো কাজের। ব্যায়াম করার পর তরমুজ খেলে খুব দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। তরমুজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এমাইনো এসিড, পটাশিয়াম ও মিনারেল ব্যায়ামের পর খুব সহজেই পেশিতে শক্তি যোগাতে সহায়তা করে।


তরমুজে কি ভিটামিন আছে

তরমুজে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন গুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

  • তরমুজে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যারোটিনয়েডস যা শরীরের কোষ কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • তরমুজে রয়েছে ভিটামিন বি৬, যা মস্তিষ্ক সচল রাখতে সাহায্য করে।
  • তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং ফাইবার, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখে।
  • তরমুজে থাকা ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই উপকারী।
  • তরমুজে রয়েছে citrulline, যা পেশীর ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।


তরমুজের বিচির উপকারিতা

এই গরমের দিনে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা সবার জানা কিন্তু তরমুজ খেতে গিয়ে এর বিচির কারণে বিরক্ত হন অনেকেই। অথচ তরমুজের বিচি খেলে কি হয় তা অনেকেই জানেন না। তরমুজের বিচি শরীরের নানা উপকারে আসতে পারে। এক কাপ তরমুজের শুকনো দানায় রয়েছে ৬০০ ক্যালোরি। তরমুজের বিচিতে রয়েছে শর্করা অ্যামিনো এসিড, খাদ্য আঁশসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেল যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি৬ ইত্যাদি। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে ও হার্টে সুস্থ রাখতে তরমুজের বিচি অনেক উপকারী।


তরমুজের বীজ খাওয়ার নিয়ম

তরমুজের বিচি খাওয়ার নিয়ম নিচে আলোচনা করা হলো :-

তরমুজের বিচিকে ৩২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপে একটি বেকিং সীডে ১৫ মিনিট হালকা রোস্ট করে অল্প পরিমাণে লেবুর রস এবং লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে সাবধান ১৫ মিনিটের বেশি গরম করলে তরমুজের বিচির গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাবে।


তরমুজের খোসার উপকারিতা

তরমুজ খাওয়ার পরে সবাই সাধারণত তরমুজের খোসাটি ফেলে দেয়। কিন্তু তরমুজের খোসা ফেলে দিবেন না কারণ সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা তরমুজের খোসা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছে। এই গবেষণায় তারা তরমুজের খোসায় এমন কিছু বিশেষ রাসায়নিক যৌগ নির্ণয় করেছেন যেগুলো মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী এবং কার্যকরী।

তরমুজের খোসায় থাকে সাইট্রুলিন যা রক্তনালীর প্রসারণ ঘটিয়ে পেশীতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। সাইট্রুলিন যৌন আকাঙ্ক্ষা ও যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। এ সাইট্রুলিন ফ্রি রেডিকেল দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সাইট্রুলিন অ্যামিনো এসিডে পরিবর্তিত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হার্ট ও কিডনির সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। তরমুজের খোসায় পানির পরিমাণ বেশি থাকায় ডিহাইড্রেশন বা পানিরশূন্যতা প্রতিরোধ করে এবং এতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমাতে সাহায্য করে। তরমুজের খোসা খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে আসে এবং রক্তের চর্বি ও কোলেস্টল কমাতে এটি ভালো ভূমিকা পালন করে।

তরমুজের বিচির অত্যন্ত উপকারী দিক আছে হার্ট সুস্থ রাখে তরমুজের বিচিতে যে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় তা হার্ট সুস্থ রাখতে ব্যাপক অবদান রাখে এটির হৃদপিন্ডের কার্যকলাপ স্বাভাবিক করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এছাড়াও বিচিতে সাইট্রুলিন নামে এক পদার্থের সমৃদ্ধ আছে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। হার্টকে রক্ষা করে এবং শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। তরমুজের বিচিতে এন্টি অক্সিজেন রয়েছে যা হার্ট সুস্থ রাখে এবং ইউনিয়ন সিস্টেম শক্তিশালী করে।

তরমুজের বিচিতে বিশেষ করে লৌহ ও খনিজ অংশ ইমিউনিটি ফাংশন বাড়ায়। তরমুজের বিচি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এ ব্যাপারে সাহায্য করে।

তরমুজে উপস্থিত জিঙ্ক পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করে। জিংক পুরুষ প্রজনন প্রজননের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিংক পুরুষের শুক্রানুর মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।


খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়

আমাদের মধ্যে অনেকেই রোজা রাখি। সারাদিন রোজা রাখার পর শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য ইফতারে আমরা তরমুজ খেয়ে থাকি। সারাদিন রোজা রাখার কারণে অনেকেই খালি পেটে ইফতারে তরমুজ খেয়ে থাকি যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খালি পেটে তরমুজ খাওয়া ঠিক নয়।

খালি পেটে তরমুজ খেলে পেটের গ্যাস ও এসিডিটির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যাদের এমনিতে গ্যাসের সমস্যা তারা খালি পেটে তরমুজ খাবেন না। তারা অবশ্যই তরমুজ খাওয়ার পূর্বে হালকা পাতলা অন্য কিছু খেয়ে নিবেন। যারা রোজা রাখেন তারা খেজুর খেজুরের সঙ্গে তরমুজ খেতে পারেন। যেটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।


তরমুজের অপকারিতা

তরমুজের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। অধিক পরিমাণে তরমুজ খেলে ডায়রিয়া সহ পেটের নানা রোগ দেখা দিতে পারে। তরমুজে থাকা সুগার কম্পাউন্ড বুক জ্বালাপোড়া ও বদহজমের মত সমস্যা তৈরি করতে পারে। তরমুজে অধিক শর্করা রয়েছে তাই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে তরমুজ খেলে ডায়াবেটিক্স হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। পুষ্টিবিদরা বলছেন দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। ৫০০ গ্রাম তরমুজ খেলে ১৫০ গ্রাম ক্যালোরি পাওয়া যায়। এর বেশি তরমুজ খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

অনেকেই তরমুজ ফ্রিজে ঠান্ডা করে খান যা শরীরের জন্য অনেক পেটের ক্ষতি বেড়ে যায়।

তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to top