রোজা রেখে কি করা যায় আর কি করা যায় না

রোজা রেখে কি

আপনারা কি রোজা রেখে কি করা যায় আর কি করা যায় না এ সম্পর্কে কি আপনি জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় প্রবেশ করেছেন। আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করব রোজা রেখে গালি দিলে কি হয়, নামাজ না পড়লে কি হয়, মাথায় তেল দেওয়া, রক্ত দেওয়া যাবে কি, ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে কি, ব্রাশ করা যাবে ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব। রোজা রেখে স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে

এসব বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

রোজা রেখে কি ব্রাশ করা যাবে

আপনারা অনেকেই জানতে চান রোজা রেখে ব্রাশ করা যাবে কিনা? আসলে এর উত্তর হল:- টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙ্গে না। কারণ টুথপেস্ট কেউ খেয়ে ফেলে না। তবে ব্রাশ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে. পেস্ট যাতে পেটে চলে না যায়। আবার অনেকেই বলেন টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করলে রোজা মাকরূহ হয়ে যায়। তবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, রোজাদারের মুখের গন্ধ মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশক আম্বরের চেয়েও প্রিয়। তাই রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে মেসওয়াক করা সব থেকে উত্তম।

রোজা রেখে গালি দিলে কি হয়

ইসলামে ঝগড়া-বিবাদ ও অশ্লীল কথাবার্তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রমজান মাসে রোজা অবস্থায় এটি আরো মারাত্মক। এগুলো থেকে বিরত থাকা রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। রোজাদারের উচিত যেন জিভও রোজা রাখে অর্থাৎ সে যেন প্রত্যেক নোংরা কথা থেকে, গীবত, চুগলখোরী, লাগান-ভাজান অশ্লীল ও মিথ্যা কথা থেকে বিরত থাকে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রোজা রেখে নোংরা কথা ও তার উপর আমল ত্যাগ করতে পারল না। তার পানাহার ত্যাগ করার মাঝে আল্লাহর প্রয়োজন নাই অর্থাৎ তার রোজা কবুল করার কোন ইচ্ছে নেই। আর তার মানে তার রোজা আল্লাহ কবুল করেন না। রোজা রেখে চুল, দাড়ি, নখ এবং অবাঞ্ছিত লোম কাটা যাবে কিনা?

রোজাদার ব্যক্তি যদি পরিবারের ছোট -বড় কারো সঙ্গে দুর্ব্যবহার, পরিচিত- অপরিচিত যে কোন লোকের প্রতি কটু বাক্য, জুলুম, নির্যাতন, গালিগালাজ ইত্যাদিতে লিপ্ত হয় তাহলে সে রোজা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই প্রত্যেক রোজাদারের উচিত রোজার মাসে ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করে সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত করা।

কেউ যদি গালিগালাজ করে রোজাদারের উচিত তার জবাবে গালি না দেওয়া। র কেউ যদি জগড়া বিবাদ মারামারি করতে চায় তার উচিত তা এড়িয়ে চলা। রমজান মাস নিয়ে ক্যাপশন, এসএমএস ও স্ট্যাটাস পিক

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ রোজা রাখলে সে যেন অশ্লীল কথা করে। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করে সে যেন বলে সে রোজাদার। দলিল:- মুসলিম

রোজা রেখে নামাজ না পড়লে কি হয়

যিনি রোজা রাখেন কিন্তু নামাজ পড়েন না তার রোজা রাখা একেবারেই অনর্থক। যার অন্তরের মধ্যে আল্লাহর ভয় আছে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও সমর্থন করতে পেরেছে আর সেটা যদি না হয়ে থাকে এই সিয়ামের কোনো ফজিলত নেই। নামাজ না পড়ে আপনি যদি শুধু রোজা রাখেন, তাহলে আপনি শুধু শারীরিকভাবে উপকৃত হবেন। কিন্তু রোজার কোন ফজিলত আপনি লাভ করতে পারবেন না।

ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে দ্বিতীয়টি হচ্ছে নামাজ। রমজান মাস না থাকলেও নামাজ পড়তে হয়। নামাজ ১২ মাস আল্লাহ তার বান্দার উপর ফরজ করে দিয়েছেন। নামাজ না পড়লে কখনোই জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়।

আবু আমর শায়বানী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু -এর বাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এ বাড়ির মালিক আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়?’ তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে সালাত আদায় করা।’

হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, ‘নামাজ বেহেশতের চাবি। ’ চাবি ছাড়া যেমন তালাবদ্ধ ঘরে প্রবেশ করা যায় না। তেমনি নামাজ কায়েম করা ব্যতীত বেহেশতে যাওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেয়া হবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘মুসলমান ও অমুসলমানের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ। ’ অর্থাৎ মুসলমানরা নামাজ পড়েন আর অমুসলমানরা নামাজ পড়েন না। সে হিসেবে যারা নামাজ পড়ে না, তারা নিঃসন্দেহে কুফরিতে লিপ্ত হয়।

রোজা রেখে মাথায় তেল দেওয়া যাবে

রোজা অবস্থায় তেল,সুরমা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা যায়। এতে রোজার কোন ক্ষতি হয় না। রোজা অবস্থায় মাথা, চোখ, মুখ, হাত, পা, শরীরে যে কোন জায়গায় তেল ব্যবহার করা যায়। তবে রাতের বেলায় শোয়ার আগে পুরুষের সুরমা ব্যবহার করা সুন্নত। আর দিনের বেলায় পুরুষের সুরমা ব্যবহার করা তবে মহিলারা দিনে ও রাতে সুরমা ব্যাবহার করতে।
সুগন্দি ব্যাবহারের ক্ষেত্রে পুরুষেরা ঘর ও বাহিরে ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু নারীরা ঘরে সুগন্দি ব্যবহার করতে পারবে তবে বাহিরে ব্যবহার করতে পারবে না।

হাদিসে আছে , পুরুষের জন্য সুগন্ধি, মেয়েদের সাজ রঙ। দলিল :- আবু দাউদ শরীফ


রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে কি

আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানতে চান রোজা রেখে রক্ত দেওয়া যাবে কিনা এ সম্পর্কে অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন আসলে রোজা রাখা অবস্থায় কোন রোগীকে রক্ত দিলে রোজা ভাঙবে না।

রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণ হলো স্বাভাবিক প্রবেশ পথ দিয়ে শরীরে কোন কিছু প্রবেশ করানো। শরীর থেকে কিছু বের হলে রোজা ভাঙ্গে না। তাই রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে রোজা ভাঙ্গে না।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সাহাবি ইকরিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হজের জন্য ইহরাম বাঁধা অবস্থায় শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন এবং রোজা অবস্থায়ও শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন।’ দলিল :- বুখারি, হাদিস: ১৯৩৮

রোজা রেখে পরীক্ষার জন্য কিংবা কোনো রোগীকে দেওয়ার জন্য রক্ত দিলে, রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে কেউ যদি শারীরিকভাবে এমন দুর্বল হয়, যে রক্ত দিলে তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়বার অর্থাৎ রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলবে, তাহলে তার জন্য রক্ত দেওয়া মাকরুহ। দলিল :- আল-বাহরুর রায়েক, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৭৩

তাই রমজান মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি রক্ত দিয়ে মানবসেবায় অংশগ্রহণ করা উচিত।

রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে কি

অনেকের প্রশ্ন থাকে রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে কিনা? শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য ইনহেলার মুখের ভিতর স্প্রে করা হয়। এতে যে জায়গায় শ্বাসরুদ্ধ হয় সে জায়গাটি প্রশস্ত হয়ে পড়ে। এতে শ্বাস নিতে সহজ হয়। ওষুধটি গ্যাসের মত দেখা যায় কিন্তু বাস্তবে এটি তরল ওষুধ। মুখে স্প্রে করার পর রোজা ভেঙ্গে যায়। তবে মুখে স্প্রে করার পর না গিলে যদি থুতু দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

রোজা রেখে কি করা যায় আর কি করা যায় না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to top