আপনারা কি রোজা রেখে স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে এ সম্পর্কে জানতে তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় প্রবেশ করেছেন। আজকের এই আলোচনায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে, রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম, স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায় ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। রমজান মাস নিয়ে ক্যাপশন, এসএমএস ও স্ট্যাটাস পিক
স্বপ্ন দোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যায়?
আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যায় এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন না। আসলে স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভেঙে যায় না। স্বপ্নদোষ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কেউ যদি মনে করেন রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তাদের ধারণাটি সঠিক নয়।
হাদিসে এসেছে আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, ”তিনটি জিনিস রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। বমি, শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ। রোজা রেখে চুল, দাড়ি, নখ এবং অবাঞ্ছিত লোম কাটা যাবে কিনা?
দলিল:- বায়হাকি, হাদিস : ৪/২৬৪; আদ্দুররুল মুখতার : ২/৩৯৬; মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ৫২৮৭; নাসবুর রায়াহ : ২/৪৪৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৩/১৭০; জামে তিরমিজি, হাদিস : ৭১৯
স্বপ্নদোষ ছেলে ও মেয়ে উভয় ক্ষেত্রে হতে পারে। স্বপ্নদোষ হলে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের উপর গোসল ফরজ করা হয়েছে। যেহেতু স্বপ্নদোষ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাই স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না সুতরাং রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙ্গে যায় এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল
স্বপ্ন দোষ হলে রোজা হবে কি?
আপনারা অনেকেই জানতে চান স্বপ্নদোষ হলে রোজা হবে কি?
স্বপ্নদোষ হলে রোজা হবে। উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো মনোযোগ সহকারে পড়লে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।
সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে?
আমাদের সমাজে অনেকের মাঝে ধারণা রয়েছে, সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু তাদের ধারণাটি সঠিক নয়। সেহেরী খাওয়ার পর কোন রোজাদার ব্যক্তির যদি স্বপ্নদোষ হয় তাহলে তার রোজা ভাঙ্গে না। কারণ স্বপ্নদোষ ইচ্ছাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই রোজা সম্পূর্ণ করা যাবে। এর জন্য কাজা বা কাফফারা করার প্রয়োজন পড়বে না।
হাদিসে এসেছে, ”বমি, শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ এই তিনটি কারণে রোজা ভাঙ্গে না”
সেহরি খাওয়ার আগে স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা হবে?
সেহরি খাওয়ার আগে স্বপ্নদোষ হলে রোজা হবে।স্বপ্নদোষ হলে গোসল ফরজ হয়ে যায়। সেহেরী খাওয়ার সাথে স্বপ্নদোষের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ফজর নামাজ পড়ার পূর্বে অবশ্যই গোসল করে নিতে হবে। কারণ নাফাক অবস্থায় নামাজ পড়া যায় না।
হাদিসে আছে, গোসল ফরজ হওয়া সত্ত্বেও কোনো কারণ ছাড়া অপবিত্র অবস্থায় এক ওয়াক্ত নামাজের সময় অতিবাহিত হলে মারাত্মক গুনাহ। (দলিল :- বাদায়ে ১/১৫১)
নাপাক অবস্থায় সেহরি খেলে রোজা হবে?
নাপাক অবস্থায় সেহরি খেলে অবশ্যই রোজা হবে। তবে নাপাক অবস্থায় নামাজ পড়া, তাওয়াফ, কোরআন স্পর্শ করা, কোরআন তেলাওয়াত করা ও মসজিদে প্রবেশ করা ছাড়া বাকী সব কাজ করা যায়।
স্বপ্নদোষ হলে কি সেহরি খাওয়া যাবে?
সাধারণত স্বপ্নদোষ হলে সেহরি খাওয়া যাবে। তবে স্বপ্নদোষ হলে ফরজ গোসল করে নেওয়া উত্তম। স্বপ্নদোষ হলে নামাজ, তাওয়াফ, কোরআন তেলাওয়াত ও স্পর্শ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা ছাড়া অন্যান্য কাজ করা যায়। তাই সেহরিও খাওয়া যায়।
হাদিসে আছে , স্বপ্নদোষ হলে গোসল ফরজ হয়। আর গোসল ফরজ অবস্থায় নামাজ, তাওয়াফ, কোরআন তেলাওয়াত ও স্পর্শ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা ছাড়া অন্যান্য সবধরণের কাজ করা যায়। (দলিল :- বুখারি ২৭৯)
এবং ফরজ নামাজের পূর্বে গোসল করে নামাজ আদায় করতে হবে।
রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম
স্বপ্নদোষ হলে শরীর নাপাক হয়ে যায়। তখন শরীর পাক করার জন্য গোসল করার প্রয়োজন হয় একে ফরজ গোসল বলে। রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলেও ফরজ গোসল করে নিতে হয়। কারণ ফরজ গোসল না করলে নামাজ, তাওয়াফ, কোরআন তেলাওয়াত ও স্পর্শ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা যায় না।
আল্লাহ তায়ালা সূরা মায়েদার ছয় নম্বর আয়াতে বলেছেন, ”তোমরা যদি নাপাক হয়ে থাকো তাহলে গোসল কর। ”
আল্লাহ আরো বলেন, হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা মাতাল অবস্থায় থাকো তখন তোমরা নামাজের ধারে কাছেও যেও না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা বুঝতে পারবে তোমরা কি বলছো আর যৌনমিলন করার পরে যতক্ষণ না পর্যন্ত গোসল করছ। (দলিল:- সূরা আন নিসা আয়াত ৪৩)
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়
স্বপ্নদোষ একটি নরমাল বিষয়। এর উপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রন নেই। তবে অনেকের অতিরিক্ত মাত্রায় স্বপ্ন দোষ হয়। এর জন্য অবশ্যই ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে যাদের স্বপ্নদোষ অতিৰিক নয় তারা নিচের কিছু নিৰ্দেশনা ফলো করতে পারেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে স্বপ্নদোষের মাত্রা কমে যাবে।
- পর্ন মুভি-ভিডিও ক্লিপ দেখা বাদ দিন।
- ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত পানি পান করবেন না।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রস্রাব করে নিন।
- রাতে খাবার পর পর কিছুক্ষণ হাটা হাটি করুন।
- দিনা পাতা অথবা মিছরি খাবার অভ্যাস করুন।
- রাতে ঘুমানোর আগে নিজেকে শান্ত রাখুন, গভীর স্বাস নিন বা পারলে মেডিটেশন করুন।
- কম করে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করুন।
- নিজের চিন্তা ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন।