দুই দফা দাবিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচি পালন করছে। তাদের দাবি না মেনে না নেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি বন্ধ ও ক্লাস বর্জনের ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে বেলা ১২টার দিকে ‘ব্রাক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস কমিউনিটি’ মানববন্ধনের ডাক দেয়। তারা এই মানববন্ধন থেকে তাদের দুই দফা দাবি তুলে ধরে।
শিক্ষার্থীদের দুই দফা দাবি
এই দুই দফা দাবি হলো ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্য এবং ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পষ্ট অবস্থান কী তা একটি বিবৃতির মাধ্যমে জানাতে হবে।
এ দুই দফা দাবিতে এখন পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে । এ বিষয়ে প্রশাসন যদি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি বন্ধ ও ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষাথীরা।
এছাড়াও আন্দোলনকারীরা এখন পর্যন্ত আন্দোলন মেনে নেওয়ার কারণে তারা ব্রাকের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন বিকাশ, ব্রাক ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান বয়কটের জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে এবং তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুই দফা দাবিতে আন্দোলনে আহবান জানিয়েছে।
দুই দফা দাবি কেন?
গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর এক সেমিনারে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ও নতুন শিক্ষাক্রমের ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচির সমালোচনা করায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করে ব্র্যাক প্রশাসন।
সেমিনারে তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করার কাজ চালানো হচ্ছে। এ সময় তিনি সবার সামনে ওই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্পের দুটি পাতা ছিঁড়ে ফেলেন।
সবাইকে এর প্রতিবাদ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন আপনাদের মধ্যে যারা সামর্থ্যবান তারা প্রত্যেকটি লাইব্রেরীতে গিয়ে সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্য বই কিনে এই গল্পের দুই পাতা ছিড়ে লাইব্রেরীতে ফেরত দিতে দিয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি করার কথা বলেছেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
তবে আসিফ মাহাতবের চাকরিচ্যুত হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি আন্দোলনকারীরা তাদের মতে তাকে চাকরিচ্যুত করার ধরন কোনরকম প্রফেশনালিজমে পড়ে না। মূলত এই কারণেই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। আন্দোলনকারীরা আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করার সুস্থ কারণ এবং ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কে ব্রাকের অবস্থান কি এটাও তারা বিবৃতিতে জানাতে বলে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলন
মানববন্ধনে প্রতিবাদকারীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের দাবি ও প্রতিবাদের ভাষা ফুটিয়ে তুলছে। আন্দোলনে তাদের তারা , ‘শরিফ থেকে শরিফা মানিনা মানবো না’, ‘ এই বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই’ ‘ট্রান্সজেন্ঠার আর হিজড়া এক নয় , এক নয় ’, ‘নো টু এলজিবিটিকিউ’, ‘তোমার আমার বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই’, ‘নো টু রেইবো টেরোরিস্ট’, ‘ডাচ ব্র্যাক সাপোর্ট এলজিবিটিকিউ ? উই ব্র্যাকিয়ানস ডোনট সাপোর্ট এলজিবিটিকিউ‘. উই ডো নোট প্রমোট এলজিবিটিকিউ‘, ‘সমকামিতার বিরুদ্ধে লড়াই করবো একসাথে‘ ‘আমার সোনার বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই‘ এসব প্লেকার্ড এবং স্লোগান দিয়ে তাদের আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষার্থী বলেন, আসিফ মাহতাব স্যারের সাথে অন্যায় করা হয়েছে। এটি আন প্রফেশনালিজম দেখিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে বলতে চাই, বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউ আর ট্রান্সজেন্ডারদের কোনো ঠাঁই নেই। ট্রান্সজেন্ডার সকল ধর্মের কাছে অবৈধ, বাংলাদেশের আইন অনুয়ায়ী এটা বৈধ না। যারা এটা বৈধতার জন্য কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা যুদ্ধ করবো। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, যারা স্বাধীনতার নাম দিয়ে মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, তারা দেশ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করছে। ব্র্যাক বাংলাদেশের গ্রাম পর্যন্ত সমকামিতা ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এটা মানসিক অসুস্থতা । ট্রান্সজেন্ডার এবং হিজড়া কখনো এক নয়।
এই শিক্ষককে ব্র্যাক থেকে চাকরিচ্যুতের খবর প্রকাশের পর থেকে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বিবৃতি দিয়ে বলে চাকরি হারানো খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসের সঙ্গে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কোনো চুক্তি নেই।
আরো পড়ুন:- ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া এক নয়।