আগামীকাল ৭ই জানুয়ারির অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪। এরই মধ্যে শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সারা দেশেকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসারসহ হাজার হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
৭ই জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এইদিকে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীরা ভোটের প্রচার-প্রচারণা শেষ করে নির্বাচনের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তারা কেন্দ্র ভিত্তিক পোলিং এজেন্ট চূড়ান্ত করন সহ ভোটের দিনকার কার্যক্রম গুলোর প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ৬ ও ৭ তারিখ টানা ৪৮ ঘন্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি।তারা সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করে যাচ্ছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এবার আসন সংখ্যা ৩০০টি যার মধ্যে ২৯৯ টি আসনে নির্বাচন হবে। নওগাঁ ২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় সে আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪
রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার মোট ২৭ টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। এদের মধ্যে সবথেকে বেশি প্রার্থী নিয়ে এবার নির্বাচন করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করছে ২৬৬ জন প্রার্থী। এছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপি’র পক্ষ থেকে ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির পক্ষ থেকে ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পক্ষে ৫৬ জন।
২৭ টি রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৫৩৪ জন আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ৪৩৬ জন। ফলে এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১৯৭০ জন। এর মধ্যে ৯০ জন নারী প্রার্থী ও ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রার্থী।
এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো হলো:-
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন,বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি, গণতন্ত্রী ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল),ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পাটি, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ),বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পাটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
ব্যালট পেপার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২২৫ টি। এসব কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৩৯ হাজার ৬১টি কেন্দ্রে ব্যালেট পেপার যাবে ভোটের দিন সকালে এবং বাকি ২হাজার ৯৬৪ টি কেন্দ্রে ব্যালেট পেপার যাবে ভোটের আগের দিন অর্থাৎ শনিবার ব্যালেট পেপার পাঠানো হবে।
সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার বোর্ড গ্রহণের দিন ব্যালেট পেপার সংগ্রহ করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে হস্তান্তর করবেন।
দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক
নির্বাচন দেখার জন্য ১৮৬ জন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মী।
এ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষন করতে ২০ হাজার ৭৭৩ জন দেশি পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ রাখতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ লাখ ১৭হাজার ১৪৩ জন আনসার সদস্য রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশ, কোস্টগার্ড, র্যাব,নৌ বাহিনী ও বিজিবি।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক এ কে এম আমিনুল হক জানান এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র নিরাপত্তা রক্ষা , ভোট কেন্দ্র ও নিরাপত্তার ৫ লক্ষ ১৭হাজার ১৪৩ জন সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে।
এদের মধ্যে ৪২ হাজার ১৪৯ টি ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা রক্ষায় ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৮৮ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায় তিন হাজারের মতো এক্সিকিউটিভ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োজিত করা হয়েছেন। এই শুক্রবার থেকে মাঠে নেমেছেন আরও ৬৫৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। তারা ভোটের আগে-পরে মিলিয়ে আরো পাঁচ দিন দায়িত্ব পালন করবেন।
আরো পড়ুন: টাঙ্গাইল-৪ আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা সমর্থন দিচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে