আপনারা কি রোজা রেখে স্ত্রীকে চুমু ও সহবাস যাবে কি সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আপনারা সঠিক জায়গায় প্রবেশ করেছেন। আজকের এই পোস্টে আমরা রোজা রেখে স্ত্রীকে চুমু ও সহবাস করা যাবে কিনা। এছাড়াও রাতে সহবাসের পর রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।
এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আশা করি আপনার সকল সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। রোজা রেখে চুল, দাড়ি, নখ এবং অবাঞ্ছিত লোম কাটা যাবে কিনা?
রোজা রেখে স্ত্রীকে চুমু দেওয়া যাবে
রোজা অবস্থায় বউকে চুমু দেওয়া বা আলিঙ্গন করা জায়েজ আছে, তবে যাদের বীর্যপাতের আশংকা আছে তাদের এই কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে খেয়াল রাখতে হবে ঠোঁটে চুমু দেয়ার ক্ষেত্রে এক জনের মুখের লালা অপরজনের মুখে যাতে প্রবেশ না করে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লামও রোজা রাখা অবস্থায় বউকে চুমু দিতেন ও আলিঙ্গন করতেন। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু হতে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দিতেন এবং আলিঙ্গন করতেন। কিন্তু আপন চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অধিকারী। দলিল:- বুখারী ১৮৪১ মুসলিম ১১২১
বীর্যপাতের আশঙ্কা বা সহবাসে লিপ্ত আশঙ্কা না থাকলে স্ত্রীকে চুমু বা আলিঙ্গন করা যাবে, এতে রোজার উপর কোনো রকম ক্ষতি হবে না।
গোসল ফরজ হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, এটি করা মাখরুহ। যুবকদের বিশেষভাবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু বলেন, আমরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সাথে একসাথে বসে ছিলাম। তখন এক যুবক এলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি রোজা রেখে চুমু দিতে পারবো?’ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, ‘না। ‘ অতঃপর এক বৃদ্ব আসলেন তিনিও একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, ‘হ্যা।’ এতে আমরা অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলাম।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, আমি জানি তোমরা কেন একে অপরের দিকে তাকাচ্ছ। শোনো, বৃদ্ধ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ( দলিল:- মুসনাদে আহমদ: ২ / ১৮০ ও ২৫০ )
তবে কোনো স্বামী যদি জোর করে স্ত্রীর সাথে সহবাস করেন, সেক্ষেত্রে স্বামীর রোজা ভেঙ্গে যাবে কিন্তু স্ত্রীর রোজা ভাঙবে না।
হাদীসে এসেছে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার উম্মতের ওপর থেকে ত্রুটিবিচ্যুতি, ভুলে যাওয়া ও জোর করিয়ে করানো কাজকে মার্জনা করেছেন।
চুমু খেলে কি রোজা ভেঙে যায়
চুমু খেলে কি রোজা ভেঙ্গে যায়? এই নিয়ে আপনাদের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকে। আপনারা এ সম্পর্কে জানতে গুগুলে স্ত্রীকে চুমু খেলে কি রোজা ভেঙ্গে যায় এটা লিখে করে থাকেন। আসলে স্ত্রীকে চুমু খেলে রোজা ভাঙ্গে না। ইসলামে বউকে চুমু দেওয়া বা আলিঙ্গন করা জায়েজ আছে। তবে পর নারীকে চুমু দেওয়া যেনা করার শামিল।
যদি ঠোঁটে চুমু দেয়ার ক্ষেত্রে এক জনের মুখের লালা অপরজনের মুখে যাতে প্রবেশ না করে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
রোজা অবস্থায় সহবাস করা যাবে কি
আমরা সকলেই জানি রোজা রেখে পানাহার ও সহবাস করা নিষেধ। কিন্তু আপনার অনেকেই গুগলের সার্চ করে থাকেন রমজানে রাতের বেলায় স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করা জায়েজ আছে কি? এই প্রশ্নের উত্তর হল রোজার মাসে রাতে স্ত্রী সঙ্গে সহবাস করা জায়েজ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, রমজান মাসে রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তোমরা নিজেদের সঙ্গে খেয়ানত করেছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তওবা কবুল করেছেন এবং ক্ষমা করেছেন। অতএব তোমরা এখন তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ যা লিখে দিয়েছেন তা অনুসন্ধান করো। দলিল:- পবিত্র কোরআন সূরা বাকারা আয়াত ১৮৭
আল্লাহ ইফতারির পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা হালাল করেছেন। এক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে, যাতে রোজা অবস্থায় কেউ সহবাসে লিপ্ত না হয় সে ক্ষেত্রে তাদের রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
রাতে সহবাসের পর রোজা রাখার নিয়ম
আপনারা অনেকেই রাতে সহবাসের পর রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আপনাদের সুবিধার জন্য এ সম্পর্কে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করব।
রমজান মাসে রাতে সহবাসের পর ফরজ গোসল না করে সেহরি খাওয়া জায়েজ আছে। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে ফরজ গোসল না করে নামাজ পড়া নিষেধ তাই ফজরের ওয়াক্তের পূর্বেই ফরজ গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, গোসল ফরজ হওয়া সত্বেও অপবিত্র অবস্থায় এক ওয়াক্ত নামাজের সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়া মারাত্মক গুনাহ। দলিল:- মুসলিম ২৫৯২
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রমজান মাসের স্বপ্নদোষ ব্যতীত অপবিত্র অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম সুবহে সাদিক অতিক্রম করতেন। তারপর তিনি গোসল করে রোজা রাখতেন। দলিল:- বোখারি : ১৮২৯, মুসলিম : ১১০৯
সহবাসের দোয়া
সহবাসের সময় নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়তে হয়
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাজাক্বতানা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি। তুমি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের যে সন্তান দান করবে, তা থেকেও শয়তানকে দূরে রাখো।’