আজ ২ ফেব্রুয়ারি রোজ শুক্রবার টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে শুরু হতে যাচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় সম্মেলন কেন্দ্র বিশ্ব ইজতেমা। এবারের ইজতেমায় দেশ বিদেশ থেকে আশা হাজার হাজার মুসল্লী একযোগে তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমার মূল আকর্ষণ হল আখেরি মোনাজাত। তাই আমরা আজকে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত কবে, কখন, কয়টায় অনুষ্ঠিত হবে সে সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। আমাদের পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ুন।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত
বিশ্ব ইজতেমার মূল আকর্ষণ হল আখেরি মোনাজাত। এই আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করার জন্য সকল শ্রেণীর মানুষ এই দিন ইজতেমার মাঠে উপস্থিত হন। আল্লাহর কাছে গুনাহ মাপ এবং রহমতের আশায় নানা পেশার হাজার হাজার মুসল্লী এদিন বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে যোগ দেয়। প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাত দুইবার হয়ে থাকে, কারণ বিশ্ব ইজতেমায দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে আখেরি মোনাজাত দুইবার অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছরের মত এবারও বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে।বিশ্ব ইজতেমার ম্যাপ ২০২৪ ডাউনলোড
ইজতেমার আখেরি মোনাজাত কবে
আগেই বলেছি যে বিশ্ব ইজতেমা দুইটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবার কারণে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত দুইবার অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবারের মতো এবারের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ৪ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে ১১ই ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ইজতেমা শুরু কবে হবে ২০২৪ ১ম পর্ব ও ২য় পর্ব
ইজতেমার আখেরি মোনাজাত কয়টায়
প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাত সাধারণত সকাল ১০টা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যেই শুরু হয়ে যায় এবং শেষ হয় সাড়ে ১১ টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে। সেই হিসেবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতের সময় পরিবর্তন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। প্রতিবারের মতো এবারও বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাত সকাল দশটা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্বের মোনাজাতের ক্ষেত্রেও একই সময়ে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইজতেমার আখেরি মোনাজাত সময়
গতবারের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শুরু হয় সকাল ১১ টা ৫ মিনিটে এবং শেষ হয় ১১ টা ৩৫ মিনিটে অর্থাৎ মোনাজাতে সময় নেওয়া হয়েছিল ৩০মিনিট।
গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বিশ্ব ইজতেমায় মোনাজাতে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নেওয়া হয়। কখনো কখনো তা আরো বাড়তেও পারে।
বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাস
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাওলানার রহমান ইলিয়াস রহমতুল্লাহ আলাইহি তাবলীগ জামাতের প্রবর্তন করেন। তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য বিভিন্ন এলাকায় সম্মেলন করতেন। সেখান থেকেই ইজতেমা নামটির আবিষ্কার হয়।
আস্তে আস্তে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। তাবলীগ জামাতের প্রচার ও ব্যাপকতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে ছাড়াও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ইজতেমা আয়োজন করা হয়।
সেসময় বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এস্তেমা অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু ভিসা জটিলতা ও ভালো সুযোগ সুবিধা থাকায় বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এক সময় এটাকে বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বিশ্ব এজতেমাকে সফল করার জন্য বাংলাদেশ সরকার টঙ্গী তুরাগ নদীর পাড়ে ১৬০ একর জমি বরাদ্দ দেয়।
বিশ্ব ইজতেমার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকায় লোকসমাগমও বাড়তে থাকে। ২০১৮ সাল থেকে আয়োজকদের মধ্যে বিরোধের কারণে বিশ্ব ইজতেমা দুটি ভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সাধারণ মানুষদের দুটি পর্বে ভাগ করে দিয়ে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করা হয়। এতে করে দুই পর্বের ভাগ করা জেলাগুলো প্রতি এক বছর পর পর বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
বিশ্ব ইজতেমা কত সালে শুরু হয়
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা ইলিয়াছ রহমতুল্লাহি ভারতে ইজতেমা ইজতেমার প্রথম আয়োজন করেন। কিন্তু বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে ১৯৪৬ সালে ঢাকা রমনা পার্ক সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে প্রথম ইজতেমা শুরু হয়। ১৯৬৬ সালে টঙ্গীতে প্রথম ইজতেমা আয়োজন করা শুরু হয়।
বিশ্ব ইজতেমা কেন বাংলাদেশে হয়
১৯৪৬ সালে রমনা পার্কের কাকরাইল মসজিদে প্রথম অনুষ্ঠিত ইজতেমা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এর ১০ বছর পর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে টঙ্গীতে জুট মিল সংলগ্ন একটি মাঠে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ইজতেমায় বিদেশি জামাতও অংশ গ্রহণ করে।
সেখান থেকেই এর নাম বিশ্ব ইজতেমা নাম হয়। এরপর ১৯৬৭ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব ইজতেমার জন্য ১৬০ একর জমি বরাদ্দ দেয়।
বিশ্ব ইজতেমা কি জায়েজ
বিশ্ব ইজতেমা জায়েজ কিনা এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মতবাদ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন বিশ্ব ইজতেমা গরিবের হজ। ইজতেমায় করলে গুনাহ মাফ হয়ে যায় এমন ধারণাও অনেকের মধ্যে রয়েছে। আরেক বিভ্রান্তি রয়েছে বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাত কে ঘিরে আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করলেই দোয়া অবশ্যই কবুল হবে। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে এগুলো সবই ভ্রান্ত ধারণা।
ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন হজ একটি ফরজ কাজ। নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর হজ ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ৯৭ নাম্বার আয়াতে বলেছেন , যাদের নিকট এই ঘর (কাবা শরীফ) পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে। তাদের উপর এই ঘরের হজ করা ফরজ।
মহানবী (স:) বলেন, হে লোক সকল ! আল্লাহ তোমাদের উপর ফরজ ফরজ করেছেন সুতরাং তোমরা হজ করো।
ছাড়াও বিশিষ্ট ইসলামী বক্তা ডক্টর জাকির নায়েক বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতকে বিদআত বলে উল্লেখ করেছেন।