জাহিদ- জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্বে নির্বাচনে উত্তাল গাজীপুর। গাজীপুর ২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহিদ আহসান রাসেল ও গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।নির্বাচনের বিভিন্ন জনসভায় তারা একে অপরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলছেন। ফলে ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে
একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন এতে কর্মীদের মধ্যে বিরোধের বিরোধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এবারে জাতীয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থিতা মনোনয়ন নেন নি অর্থাৎ তিনি এবারের নির্বাচনের প্রার্থী নন। তিনি গাজীপুর- ২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিমুদ্দিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। তিনি প্রায় প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন এবং ভোট চাইছেন।
জাহিদ- জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্বের শুরু
২০২১ সালে তখনকার গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি গোপন ভিডিও ফাঁস হয় ওই ভিডিওতে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কটুক্তি করতে দেখা যায়। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাকে বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করে গাজীপুর আওয়ামীলীগ। ওই আন্দোলনের প্রধান ভূমিকা রেখায়ছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও ক্রিয়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল। পরে তাকেই মেয়র পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। সেখান থেকে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু হয়।
পরে তাকে দল থেকে ক্ষমা করা হলেও মেয়র পথকে তাকে বহিষ্কার করা হয় এবারের মেয়র নির্বাচনে তাকে দল থেকে মনোনয়ন পত্র দেওয়া হলেও পরে তাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে। ফলে জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারের মেয়র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে তিনি বিপক্ষ দলের প্রার্থী আওয়ামী লীগের পদপ্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচিত হন। জাহিদ- জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্বে নির্বাচনে উত্তাল গাজীপুর
জাহিদ- জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্বে নির্বাচনে উত্তাল গাজীপুর
এই বিরোধের জের ধরে গতকাল স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিমুদ্দিন বুদ্দিনের সমর্থনে এক সমাবেশে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ আছেন রাসেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি মনোনয়নপত্র বাতিল করে জনাব স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিমুদ্দিন বুদ্দিনের সমর্থনে নির্বাচনে মাঠে নেমেছি।
গত কয়েক বছর ধরে তিনি গাজীপুরের ক্ষমতায় আছেন কিন্তু গাজীপুরের কোন উন্নয়ন করেননি। তিনি টঙ্গীকে এক মাদক রাজ্য বানিয়েছেন। নৌকা পেলে আওয়ামী লীগ হওয়া যায় না. যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। জাহাঙ্গীর আরো বলেন আমার কোন হার্ট নেই। আমি কাউকে ভয় পাই না।
তিনি আরো বলেন আমাদের কোন নেতাকর্মীকে বিনা কারণে গ্রেফতার বা হয়রানি করা হলে আমরা পুরো গাজীপুরকে অচল করে দেব।
ওই সমাবেশে জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, তাকে মানুষের সেবা করার জন্য আমরা তাকে চারবার ভোট দিয়ে নির্বাচন করেছি। কিন্তু তিনি বর্তমানে পরিবার তন্ত্র চালাচ্ছেন। এখানে কেউ কল কারখানা করতে গেল তাদের চাঁদা দিতে হয়।জাহিদ- জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্বে নির্বাচনে উত্তাল গাজীপুর
তিনি আরো বলেন, তার চাচা গ্রুপ বানাইছে, ফুফু গ্রুপ বানাইছে, ভাবি গ্রুপ বানাইছে, ভাই গ্রুপ বানাইছে। তারা পুরোপুরি পরিবার তন্ত্র চালাচ্ছে।
এর পাল্টা জবাবে বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা ষড়যন্ত্র করে, আমার আসনও এর বাইরে নয়। তাদের অনেক টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে তারা নির্বাচনী এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ব্যয় করছে। মানুষ এত বোকা নয়। মানুষ বুঝতে পারছে আমার দোষ না পেয়ে এখন আমার পরিবারের পিছনে লেগেছে।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
গত বৃহস্পতিবার টঙ্গী সরকারি কলেজ মাঠে পথসভা ও গণ সংযোগ করার কথা ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিমু উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের। এজন্য তারা বিকেলে কয়েকশ নেতা কর্মী নিয়ে কলেজের সামনে উপস্থিত হলে গেটে তালা বদ্ধ দেখতে পান। তারা কিছুতেই কলেজে ঢুকতে না পারায়। নেতা কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে গেটের তালা ভেঙ্গে মাঠের ভেতরে প্রবেশ করে পথ সভা করেন।জাহিদ- জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্বে নির্বাচনে উত্তাল গাজীপুর
এই ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঢাকা ও ময়মনসিংহ সড়কে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমরা পথসভা করার জন্য টঙ্গী সরকারি কলেজের মাঠ কে বেছে নিয়েছিলাম। এজন্য জাহিদ আহসান রাসেলের নির্দেশে টঙ্গী সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা আমাদের প্রচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য কলেজের গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।
এই সংবাদ সম্মেলনের কিছু সময় পর টঙ্গী কলেজের আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত এক শিক্ষার্থী জেলা রীটার্নিং অফিসারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ পত্র দায়ের করেন। ওই অভিযোগ পত্রে লেখা ছিল শীতকালীন ছুটির কারণে কলেজের গেট বন্ধ ছিল। তারা ৪০০ থেকে ৫০০ নেতা কর্মী নিয়ে কলেজের গেট ভেঙে কলেজে ভাঙচুর করে এবং পরে সমাবেশ করে।জাহিদ- জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্বে নির্বাচনে উত্তাল গাজীপুর
জাহিদ জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে স্থানীয়রা বলেন, জাহিদ ও জাহাঙ্গীরের বিরোধের কারণে আওয়ামী লীগ ও অন্য অঙ্গ সংঘটনের নেতা কর্মী ও ভোটাররা ভাগাভাগি হয়ে গেছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে উস্কানি মূলক বক্তব্য রাখছেন। ফলে দই দলের সংটঘাটের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া জাহাঙ্গীর আলম কয়েকদিন পর পর রাসেলের বাড়ির আসে পাশে টঙ্গী এলাকার গণসংযোগ করছেন। যা আওয়ামিলিগ এর নেতারা ভালো চোখে দেখছেন না।
nice news